সকাল ৫.৩০ টা, গাড়ি শহর ছেড়ে রওনা দিলো অজানা গন্তব্যের উদ্যেশে. আমরা ৬ বন্ধু মিলে চলেছি কালিম্পঙ পাহাড়ের কোনো একটি অচেনা গ্রামে. বাইরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমাদের গাড়ি গিয়ে থামলো বিন্নাগুড়িতে. প্রাতঃরাশ সেরে পুনরায় গাড়ি ছুটতে লাগলো. মালবাজার পৌঁছনোর ঠিক আগেই ডান দিকের একটি রাস্তা মিনগ্লাস চা বাগানের দিকে চলে গেছে, সেই রাস্তা দিয়ে ফ্যাক্টরির সামনে যখন পোঁছলাম ঝিরঝিরে বৃষ্টি তখন ভালোই শুরু হয়ে গেছে. এরপর গরুবাথান গ্রাম পেরোতেই কুয়াশা যেন ঘিরে ধরলো আমাদের. তার সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি ও পড়ছে. মাঝে মধ্যেই পাহাড়ের বাঁকে ছোট বড়ো ঝর্ণা দেখতে পারছিলাম.
পাইন গাছের সারি পেরিয়ে লাভা ঢোকার ঠিক আগেই গাড়ি থামানো হলো. গাড়িতেই বসেই ঠিক হলো আমরা ইচ্ছেগাঁও যাবো. সেই মতো হোমস্টের নম্বর জোগাড় করে ফোনে বুকিং সেরে ফের রওনা হলাম. লাভা ছাড়ার পর থেকেই বৃষ্টি ও কুয়াশার পরিমান কিছুটা হলেই কমতে লাগলো. আলগাড়া পেরিয়ে রামধুরার দিকে গাড়ি যেতেই কুয়াশা ফের ঘিরে ধরলো আমাদের. বেশ কিছুটা পথ যাওয়ার পরে, রাস্তার ডান দিকে ইচ্ছেগাঁও লেখা একটা বোর্ড দেখতে পেলাম. সেই মতো ওই রাস্তা ধরে আমরা এগোতে লাগলাম. ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এবরো খেবড়ো রাস্তা গিয়ে পৌঁছলাম গ্রামে.
গাড়ি থেকে নামতেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো. কোনো রকমে ছাতা মাথায় দিয়ে আমরা হোমস্টে পর্যন্ত গেলাম. রুমে লাগেজ রেখে ব্যালকনি থেকে দেখা যাচ্ছে পুরো গ্রামটাই কুয়াশা এ ঢেকে রয়েছে. ইতিমধ্যে আমাদের জন্য গরম গরম ম্যাগী ও ডিম্ সেদ্ধ ও চলে এলো. সেটা খেতে খেতে ওই গ্রামের বাড়ি-ঘর মেঘে ঢেকে যাচ্ছে, আবার মেঘ সরে যাচ্ছে সেই সব দৃশ্য মাঝে মধ্যেই ক্যামেরা বন্দি করছিলাম. বেশ কিছুক্ষন পরে আমরা দুপুরের খাবার খেতে হোমস্টের ডাইনিং ঘরে গেলাম. খাবার খেয়ে রুমে ফিরে বৃষ্টি থামতেই বন্ধুরা মিলে গ্রাম ঘুরতে বেরোলাম.
টাইলস বাঁধানো ছোট্ট পাহাড়ি পথ দিয়ে গ্রামের এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম . ওই গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িগুলো নানা রঙের পাহাড়ি ফুল গাছ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে. গ্রামের চারিদিকে নানা শাকসবজি চাষ হচ্ছে সেটা ও দেখতে পেলাম. ঘুরতে ঘুরতে গ্রামের এক বাসিন্দার সাথে আলাপ হলো. তার কাছ থেকেই জানতে পারলাম ইচ্ছেগাঁও এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬.৬০০ মিটার. ওই গ্রামে ২০০ মানুষের বসবাস রয়েছে. আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে ওখান থেকে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়. এছাড়া t আর কোথায় কোথায় যাওয়া যায় সেই বিষয়েও কথা হলো. কিছুক্ষন পর তাকে বিদায় জানিয়ে হোমস্টে তে ফিরে ঘরের জানালা খুলতেই দেখতে পেলাম মেঘ সরে গেছে.
দূরে পাহাড়ি জনপথ রামধুরা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে. তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যালকনি থেকে ডান দিকে তাকাতেই দেখলাম মেঘের আড়াল দিয়ে কাঞ্চনজঙ্গা উঁকি দিচ্ছে. সত্যি কিছুক্ষনের জন্য এক জায়গা এ দাঁড়িয়ে ওই দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম. সূর্যাস্তের সময়ে মেঘের আড়ালে লাল আভায় রাঙা কাঞ্চনজঙ্গার দৃশ্য ও ভোলার নয়. এরপর চারিদিক মেঘে ঢেকে গেলো. সন্ধ্যায় চা আর পকোড়া খেতে খেতে বন্ধুদের সাথে বেশ জমিয়ে আড্ডা ও হলো. এরমধ্যে বৃষ্টি ও শুরু হয়ে গেলো. রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমোতে গেলাম. তবে মনে মনে সবারই একটা আশা ছিল যে, যদি আগামীকাল সকালে ফের কাঞ্চনজঙ্গা দেখা যায়.
পরদিন সকালে উঠে দেখলাম মেঘে ঢেকে রয়েছে পুরো গ্রামটি. চা এ চুমুক দিতেই চোখে পড়লো ধীরে ধীরে মেঘ সরছে. এক ঝলক কাঞ্চনজঙ্গা দেখা গেলেও তা মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে গেলো. হোমস্টের ছাদে গিয়ে চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফ্রেমেবন্দি করে রাখলাম. এরপর প্রাতরাশ সেরে আমরা ইচ্ছেগাঁও কে বিদায় জানিয়ে সকলে ফের বাড়ির উদ্যেশে রওনা হলাম.
কিভাবে যাবেন- শিয়ালদা, হাওড়া ও কলকাতা রেলওয়ে স্টেশন থেকে এনজেপি যাওয়ার যে কোনো ট্রেনে এসে গাড়ি রিসার্ভ করে ইচ্ছেগাঁও যাওয়া যায়. এনজিপি থেকে ইচ্ছেগাঁও এর দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার. গাড়ি ভাড়া পড়বে ৩৫০০ টাকা. এছাড়া শেয়ার গাড়িতে করে কালিম্পঙ পৌঁছে সেখান থেকে রিসার্ভ গাড়ি করেও ইচ্ছেগাঁও যাওয়া যাবে. ভাড়া পড়বে ১২০০ টাকা. কালিম্পঙ থেকে ইচ্ছেগাঁও এর দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার.
কোথায় থাকবেন- ইচ্ছেগাঁও তে থাকার জন্য বেশ কিছু হোমস্টে রয়েছে. মুখিয়া হোমস্টে- যোগযোগের নম্বর- ৮৯৭২৪৭০২২০. খাওয়াস হোমস্টে যোগাযোগের নম্বর-৭৩৬৩৮৪০৩২০.
তাশি হোমস্টে যোগাযোগের নম্বর- ৭০৯৮৭৮৩২৮৭.
কাছাকাছি দ্রষ্টব্য স্থান- ইচ্ছেগাঁও থেকে ট্রেক করে সিলেরিগাঁও যাওয়া যায়. দূরত্ব- ২.৫ কিলোমিটার. এছাড়া এখান থেকে কালিম্পঙ শহর, রামিতে ভিউ পয়েন্ট, সাইলেন্ট ভ্যালি, রামধুরা, বার্মিক সহ আরো অনেক জায়গা ঘুরতে যাওয়া যায়.