প্রতিবারের মতো দুর্গাপুজোয় ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, সেই সময়েই হঠাৎই একদিন সকালবেলায় সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং সাইট এ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভুটানের জাতীয় উৎসবেরর কিছু ছবি দেখতে পাই. যা আমাকে খুব আকৃষ্ট করে. তৎক্ষণাৎ ওই উৎসব সম্পর্কে নেটের মাধ্যমে কিছু তথ্য পেয়ে যাই. সেই মতো ভুটানের রাজধানী শহর থিম্পু তে অনুষ্ঠিত থিম্পু সেচু উৎসবে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করি. সকাল সকাল ভারতবর্ষের জয়গাঁ থেকে ভুটান গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম ভুটানের শহর ফুন্টশিলিংয়ে. ইমিগ্রেশন অফিস থেকে পারমিট এর কাজ সমাপ্ত করে থিম্পুর উদেশ্যে রওনা হলাম. ফুন্টশিলিং মনাস্ট্রি পেরিয়ে কিছু দূর আসার পরেই প্রথম চেকপোস্ট পড়লো. সেখানে পারমিট দেখিয়ে ফের রওনা হলাম. চুখা পার হওয়ার পর থেকেই যাত্রাপথ কুয়াশায় ঢেকে গেলো. বেশ কিছুক্ষন পরে আবহাওয়া পরিবর্তিত হতে লাগলো. মাঝে দুই-তিন জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম ছবি তোলার জন্যে. যত থিম্পুর দিকে এগোতে লাগলাম, ততই সবুজের সমারোহ চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরছিল. প্রায় বিকেল বিকেল পৌঁছলাম থিম্পুতে. এরপর হোটেল খুঁজে সেখানে গিয়ে উঠলাম.
পরদিন সকালে প্রাতঃরাশ সেরে থিম্পুতে অবস্থিত তাশি চো জং এ পৌঁছে গেলাম. ওখানেই থিম্পু সেচু ফেস্টিভ্যালটি অনুষ্ঠিত হয়. পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে তাশি চো জং এর ভেতরে প্রবেশ করতেই অবাক হয়ে গেলাম. বিশাল জায়গা জুড়ে এই উৎসবটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে. আর উৎসব প্রাঙ্গনের পাশ দিয়ে গ্যালারিতে দর্শকরা বসে রয়েছে. কিছুক্ষনের মধ্যে ওই উৎসবের নানা অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো. প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতে শুরু করলাম. এরই মাঝে থিম্পুর এক স্থানীয় মানুষের সাথে পরিচয় হলো. তার কাছ থেকেই এই ফেস্টিভ্যালের বেশ কিছু বিষয় জানতে পারলাম. থিম্পু সেচু ফেস্টিভালটি একটি বৌদ্ধ ধর্মের উৎসব. লুনার ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাসের দশম দিনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে. ভুটানে গুরু রিমপোচে বৌদ্ধ ধর্মকে নিয়ে এসেছিলেন. তাকে সম্মান জানানোর উদ্যেশেই এরপর থেকে এই উৎসবটি পালিত হয়ে থাকে. রাজা টেনজিঙ রাবগে প্রথম শুরু করেছিলেন. সেই সময়ে সামান্য নাচ ই পরিবেশিত হতো. এরপর এই উৎসবটিকে ১৯৫০ সালে রাজা জিগমে দোর্জে ওয়াংচুক ধীরে ধীরে আরো সুন্দর করে তোলেন. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লামারা সহ সাধারণ মানুষেরা এই উৎসবে নানা ধরণের রঙিন পোশাক পরিধান করে অংশ নিয়ে থাকে. উৎসবের ইতিহাস জানতে জানতে ছাম নৃত্য, মুখোশ নৃত্য সহ আরো অনেক নৃত্য চাক্ষুস করলাম. সেই সঙ্গে ওই দেশ সম্বন্ধেও কিছু তথ্য পেলাম. প্রত্যেকটি নৃত্য সত্যিই রঙিন এবং খুব সুন্দর. প্রায় ঘন্টাখানেক পরে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান দেখে হোটেলে ফিরলাম. দুপুরের আহার সেরে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধেবেলায় গাড়ি করে থিম্পু শহরের রাত্রি রূপ দেখতে বেরোলাম. ছবি তুলতে তুলতে চোখ সত্যি ধাঁধিয়ে যাচ্ছিলো. এরপর হোটেলে ফিরে সেদিনের ক্যামেরাবন্দি করা ফটোগুলো দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো. তারপর ডিনার সেরে ঘুমিয়ে পড়লাম.
থিম্পু সেচু ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিনেও সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাতরাশ সেরে ফের তাশি চো জঙের দিকে রওনা হলাম. সেখানে পৌঁছে দেখলাম প্রচুর মানুষের সমাগম. বৌদ্ধ লামা এবং সাধারণ মানুষেরা ড্রামস ও করতলের তালে তালে নানা রকমের নাচ পরিবেশিত করতে লাগলো. উৎসব প্রাঙ্গনে ওই দেশের স্থানীয় মানুষ সহ বিদেশের বহু মানুষ উপস্থিত রয়েছেন. সেদিনও ফেস্টিভ্যালের প্রতিটি মুহূর্ত তুলে ধরার চেষ্টা করছিলাম. বেশ কিছুক্ষন পরে উৎসব প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে পড়লাম. সময় কম থাকার জন্যে তৃতীয় দিনে আর উৎসবটি দেখা আর হলো না. পরের দিন সকাল সকাল থিম্পু শহরকে বিদায় জানিয়ে ভুটানের একটি অজানা গন্তব্যের উদ্যেশে রওনা হলাম.
কিভাবে যাবেন- শিয়ালদা, হাওড়া এবং কলকাতা স্টেশন থেকে যে ট্রেনগুলো আলিপুরদুয়ার বা হাসিমারা আসছে. সেই ট্রেনগুলো ধরে ওই দুটো স্টেশন থেকে নেমে জয়গাঁ এসে ভুটান গেট পার করে ফুন্টশিলিং এ ইমিগ্র্যাশন অফিস থেকে পার্মিট করে বাস অথবা গাড়ি ভাড়া করে থিম্পু যেতে হবে. দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার.
কোথায় থাকবেন- থিম্পু শহরে থাকার জন্যে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে.
তথ্য- থিম্পু জাতীয় উৎসব যেহেতু একটি জাতীয় উৎসব. তাই সেই সময় টুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার সহ সরকারি কার্যালয় বন্ধ থাকে. থিম্পু থেকে অন্যান্য জায়গার পারমিট করতে হলে তা আগে ভাগেই করে নেওয়া ভালো.